‘কোভিডের পরে দেশে নারী প্রোগ্রামারের অভাব দেখা দিচ্ছে’
বিডি গার্লস কোডিং প্রকল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে আইসিটি খাতে আরও মেয়েদের নিয়ে আসা বিষয়ে আজ শনিবার বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) উদ্যোগে একটি অনলাইন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উইমেন ইন ডিজিটাল উদ্যোক্তা আছিয়া নীলা বলেন, শুধু মেয়ে প্রোগ্রামার নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি। তবে কোভিডের পরে নারী প্রোগ্রামারের অভাব দেখতে পাচ্ছি। অবস্থা এমন হয়েছে, কাজগুলো সময়মতো শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। শৈশব থেকেই ছেলেমেয়েদের প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করলে আমাদের মতো তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের জন্যনারী-কর্মী পাওয়া যাবে।
এই অভাব পূরণেই বিডি গার্লস কোডিং প্রকল্প ও কুমিল্লা ডিসির রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং শেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগকে অনুসরণ করে সারা দেশে প্রোগ্রামিং শেখানোর ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করার আশা প্রকাশ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সুযোগ পেলে নারীরা অসাধ্য সাধন করতে পারেন। পারিবারিক সংকটকে দূর করে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে আইসিটি খাতে নারীদের নিয়ে আসা আমাদের লক্ষ্য। শৈশব-কৈশর থেকে মেয়েদের প্রোগ্রামিংয়ে যুক্ত করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তাই সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতই পাশাপাশি এর জন্য কাজ করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রোগ্রামিং শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে পাইলট আকারে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখাতে পারলে আইসিটি সেক্টরে কর্মীর অভাব থাকবে না। মেয়েরা আইটি সেক্টরে কাজ করতে আস্তে পারে না এর পেছনে একটা বড় বাঁধা হলো কর্মক্ষেত্রে সন্তান দেখাশোনা করার জন্য ডে কেয়ার ব্যবস্থা না থাকা। এই বাঁধা দূর করার আহবান জানান তিনি। এছাড়া তিনি নতুন শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ৬৪টি স্কুলে পরীক্ষা কমিয়ে শেখার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করা হচ্ছে। যার ফলাফল আশা করা যায় চার-পাঁচ বছর পরে পাওয়া যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সারা দেশের যে শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য যাই, তাদের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ দেখতে পাই। আমরা আয়োজকরা যদি আগ্রহী হয়ে তাদেরকে শেখার সুযোগ করে দিতে পারি, তাহলে কাজগুলো খুব ভালোভাবে এগিয়ে যাবে।
কুমিল্লা জেলা প্রসাশনের এডিসি (আইসিটি) নাজমা আশরাফি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত রোবটিক্স ল্যাব (ফ্যাবল্যাব) থেকে এই আয়োজনে যোগ দেন।
কুমিল্লায় স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হওয়া প্রোগ্রামিং ও রোবটিক্স বিষয়ের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান তিনি। ফ্যাবল্যাব শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। এসময় কুমিল্লার একজন শিক্ষার্থী তার প্রোগ্রামিং শেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে।
উপস্থিত ছিলেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিশষ্ট শিক্ষানুরাগী ড. জাহিদ হাসান।
তিনি পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং, রোবটিক্সসহ শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন। গত চার বছরে বিডিওএসএন-এর সহায়তায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ ও এর ফলে ভাঙ্গুড়ার মেয়েদের সাফল্য তুলে ধরেন।
এছাড়া ওব্যাট আইটি সেন্টারের প্রজেক্ট অফিসার মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার সেন্টারে বিডিজিসির আয়োজনে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের প্রোগ্রামিং শেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
সভাটি পরিচালনা করেন বিডিওএসএন- এর সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা।
আন্তর্জাতিক গার্লস ইন আইসিটি দিবস ২০২২ উদযাপিত হয় প্রতিবছর এপ্রিল মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার। এবছর ২৫ এপ্রিল দিবসটি কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোলজির সহযোগীতায় সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করছে। আইসিটি খাতে বাংলাদেশী নারীদের অবদান উদযাপন করার জন্য আয়োজনগুলো করা হচ্ছে। যার শিরোনাম- লুনা শামসুদ্দোহা গার্লস ইন আইসিটি উইক ২০২২। ২২ এপ্রিল থেকে আয়োজনগুলো শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত।
এই সপ্তাহে একটি দুইদিনব্যাপী প্রোগ্রামিং ক্যাম্প, একটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, একটি জব এক্সপোজার ভিজিট ও সপ্তাহব্যাপী আইসিটি খাতে সফল নারীদের কথা ফিচার করা হচ্ছে।